হিন্দু বাড়ি দখলে নিলেন মন্ত্রী, নিন্দা জানাল ‘ঐক্য পরিষদ’
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ রাইটস ওয়াচ ইন্টারন্যাশানাল, বাংলাদেশ মাইনরিটি ফোরাম, ও বাংলাদেশ হিন্দু ফোরাম এবং আরো কিছু সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বিবৃতিতে প্রবাস কল্যাণমন্ত্রী মোশারফ হোসেন ফরিদপুরে তার পাশের হিন্দু বাড়িটি জোর করে দখল ফলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তারা অভিযোগ করেন, মোশারফ হোসেন একইভাবে ফরিদপুরে অনেকগুলো হিন্দু বাড়ি জবর দখল করেছেন, যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।
নেতৃবৃন্দ একই সাথে অভিযোগ করেন, মোশারফ হোসেন ফরিদপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। তারা অবরুদ্ধ পরিবারটিকে বাঁচানোর জন্যে আহবান জানান।
উল্লেখ্য, ইন্টারনেট ও কনফারেন্স কলে এসব স্বাক্ষর নেয়া হয়। বাংলাদেশের অনেকে এতে স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু, নিরাপত্তার খাতিরে তাদের নামগুলো বাদ দেয়া হয়েছে। কারণ মোশারফ সাহেবের হাত অনেক লম্বা। সামাজিক মাধ্যমে হিন্দু বাড়ি জবর দখলের এই সংবাদ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এবং কানাডার শুধুমাত্র একজনের ফেসবুকে ৫৫০-এর বেশি শেয়ার হয়েছে। এতকিছুর পরও সরকার বা সংশ্লিস্ট মন্ত্রীর পক্ষ থেকে কিছু বলা হচ্ছে না। অথচ দুইবার এই আবেদন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এমনকি মন্ত্রী মোশাররফ সাহেবের কাছেও পাঠানো হয়েছে ।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, শিতাংশু গুহ, যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ; তরুণ চৌধুরী, সভাপতি, ইউরোপীয় ঐক্য পরিষদ; উদয়ন বড়ুয়া, সভাপতি, ইউরোপীয় ঐক্য পরিষদ; অরুণ বড়ুয়া, বাংলাদেশ মাইনরিটি ফোরাম, জেনেভা; চিত্রা পাল, হিন্দু ফোরাম, সুইডেন; দিলীপ কর্মকার, ঐক্য পরিষদ, কানাডা; স্বদেশ বড়ুয়া, সভাপতি, ফ্রান্স ঐক্য পরিষদ; ড: সান্তায়ন কবিরাজ, বাংলাদেশ রাইটস ওয়াচ ইন্টারন্যাশানাল, লন্ডন; ড: মোহিত রয়, ক্যাম্ব, কলকাতা; রবিন গুহ, রাশিয়া; ডাক্তার রবীন্দ্রনাথ দাশ, মরিশাস; কার্তিক ঘোষ, ইতালী; মৃনাল মজুমদার, জার্মানি; পুস্পিতা গুপ্ত, লন্ডন, তুষার কান্তি সরকার, ফিনল্যান্ড; সুরঞ্জিত গুপ্ত, লোকনাথ মিশন, লন্ডন; প্রবীর মৈত্র, সভাপতি, অস্ট্রেলিয়ান ফোরাম ফর মায়নরিটিজ ইন বাংলাদেশ; মানস রয়, ক্যালিফোর্নিয়া; পবিত্র চৌধুরী, নিউইয়র্ক; সুভাষ রায়, নয়াদিল্লী; কবিতা চাকমা, অস্ট্রেলিয়া, শশাঙ্ক দাশগুপ্ত, আমেরিকা, শিবাজী রায় ও ভবানী কাশ্যপ, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট কাউন্সিল ওয়ার্ল্ড চ্যাপ্টার, তুলসী রায়, বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ পরিষদ, ফ্রান্স; দূর্গা ভট্টাচায্য, আমেরিকা; যয়েল কর্মকার প্রমুখ।
খবরটি নিন্মরূপ:
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই পরিবারটিকে বাঁচান
বাড়িটি ফারিদপুরের ঝিলটুলিতে রাজেন্দ্র কলেজ হিন্দু হোস্টেলের বিপরীতে অবস্থিত যা প্রবাস কল্যাণমন্ত্রী মোশারফ হোসেন-র বাড়ীর সাথে লাগোয়া। ওই বাড়ীটির নাম দয়াময়ী আশ্রম যা ভাজনডাঙার জমিদার সতিশচন্দ্র গুহ মজুমদার-এর। যিনি রাজন্দ্র কলেজের উদ্যোক্তাদের অন্যতম। উক্ত জমিদার পরিবারের একমাত্র সদস্য অরুণ গুহ মজুমদারের পরিবার এবং একমাত্র মেয়ে তুলি মজুমদার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। অরুণবাবু-মোশারফরা বাল্যবন্ধু! বাড়িটি বর্তমানে অর্পিত সম্পত্তি, যা অনেক আগেই মোশারফ সাহেব নিজেই করিয়ে রেখেছিলেন। বর্তমান অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন আইন আংশিক কার্যকর হবার কারণে বাড়িটি আরুন বাবু পেতে যাচ্ছেন। বাড়িটি প্রায় ৩ একর জায়গা জুড়ে যার বর্তমান দাম কয়েক কোটি টাকা, যাতে একটি দ্বিতল পুরাতন ভবন আর একটি পুরান মন্দির রয়েছে।
গত ক’দিন আগে মোশারফ হোসেন-র উকিল অরুণ বাবুর কাছ থেকে জোর করে মোশারফ সাহেবের নামে করা একটা বায়নানামা দলিলে সাক্ষর করিয়ে নেয় আদালত প্রাঙ্গণেই এবং সবার সামনে। কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি। গত ১৩ এপ্রিল সকালে মোশারফ সাহেব নিজে তার দলবল নিয়ে এসে আরুনবাবু কে বাড়ি ছেড়ে যেতে বললে সে অনেক কান্নকাটি করে কিন্তু তাতে কাজ হয়না। মোশারফ হোসেন অরুণ বাবুর পরিবারের সবাইকে জোর করে তারই এক বাড়িতে রাখেন, অভিযোগ রয়েছে, ঐ বাড়িটিও তিনি ক’দিন আগে দখল করে নিয়েছেন আর এক হিন্দুর কাছ থেকে। অরুণ বাবুকে বাড়ি থেকে বের করার সময় তার সামনে মোশারফ সাহেবের লোকজন মন্দিরটি ভেঙ্গে ফেলে। অরুন গুহবাবুর পরিবারটি-কে মোশারফ হোসেন ফরিদপুরের ভাজন্দাঙ্গার এক বাড়িতে গৃহ বন্দী করে রেখে তার নিজের গুন্ডা পাণ্ডা দিয়ে ঘিরে রেখেছেন, এমনকি ফোনেও কথা বলতে গেলে তার লোক এসে দাড়িয়ে থেকে কার সাথে কি বলছে তা মনিটরিং করছে। ওনার বয়স্ক মেয়েটাকেও বের হতে দিচ্ছে না , মোশারফ সাহেব কি করতে চাইছে তা স্পস্ট নয়। সম্ভবত; বাড়িটির আইনি প্রক্রিয়ার জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে। এরপর অরুণবাবুর কি হবে তা কেউ জানে না। মোশারফ সাহেব সম্ভবত বলতে চাইবে আরুনবাবু তার কাছে বাড়ি বিক্রি করে চলে গেছেন। অরুনবাবু কারো কাছ থেকে কোন টাকা নেননি। যখন আরুন বাবু কান্না কাটি করে বাড়ি ছাড়তে চাইছিল না তখন মোশারফ সাহেব বলেছিলেন, আমাকে যত ভাল মনে কর আমি তত ভাল না।